আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি খাস সম্পত্তির গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম আনোয়ার হোসেন তিনি উপজেলার চন্দনকৌঠা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত বুধবার এ ঘটনায় চন্দনকৌঠা গ্রামবাসীর পক্ষে রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলার কলমা ইউনিয়নের (ইউপি) চন্দনকৌঠা লসকুরি সংলগ্ন খাস সম্পত্তি থেকে এসব গাছ কাটা হয়েছে। এভাবে নির্বিচারে তাজা গাছ কাটায় সেখানে বসবাসরত আদিবাসি পল্লীর বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কলমা ইউপি আওয়ামী লীগের (পুর্ব) সম্পাদক হবার পর পরই শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের দৌরাত্ম্যে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার কলমা ইউনিয়নের (ইউপি) চন্দনকৌঠা মৌজায়, আরএস এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১৩২ নম্বর আরএস দাগে ২ একর ৩০ শতক সম্পত্তির মধ্যে ১ একর ৮১ শতক ভিটা ও পুকুর রয়েছে। ওই পুকুর পাড়ের প্রায় ১০টি তাজা অপরিপক্ক আম গাছ কেটে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। গ্রামবাসিরা জানান, এর আগেও তাল, আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির তাজা গাছ কেটে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। দু’দফায় মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা হবার পর তিনি আর নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তার দাপটে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরেজমিন দেখা গেছে কলমা ইউপির দরগাডাংগাহাট থেকে চন্দনকোঠা গ্রামে প্রবেশ পথে রাস্তা সংলগ্ন পুকুর রয়েছে। পুকুরের দক্ষিণ পার্শের খাস সম্পত্তিতে রয়েছে আম বাগান, আর দক্ষিনে রয়েছে আদিবাসি বসতি। এদিন গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে সেখানে জড়ো হয় অনেক আদিবাসী নারী-পুরুষ। এসময় তারা বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এটা খাস জায়গা ও পুকুর, এই জায়গাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করেন। কিন্তু আনোয়ার মাস্টার সব সময় জাতি তুলে প্রচুর গালমন্দ করে, এমনকি সে পুরো জায়গা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। বাড়ির গরু-ছাগল বাঁধার দরকার হলেও মাস্টার বাঁধতে দেয় না। তার ভয়ে জায়গায় কেউ যায় না। এমনকি পুকুরে গরু গোসল পর্যন্ত করাতে দেয় না। এছাড়াও পুকুরে এক জাতীয় শামুক থাকে সেটা আমরা খায়, কিন্তু পুকুরে নামতে দেয় না। আমরাও ভয়ে কিছু বলি না। তারা আনোয়ার মাস্টারের কঠোর শাস্তি ও তার রাহুগ্রাস থেকে পরিত্রাণ চাই। এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার পিতা এমপির পিতার কাছ থেকে জায়গা ও পুকুর কিনে নিয়েছিল। পিতা মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশসুত্রে এসব জায়গা ভোগদখল করে আসছি। জায়গা তো খাস কেনা-বেচা কিভাবে হল জানতে তিনি জানান, দলিল খারিজ খাজনা সব আছে, আমি নোয়াখালীতে আছি আগামী রবিবারে ভূমি অফিসে জমির কাগজ দেখানো হবে। এবিষয়ে আদিবাসী পরমেস হেমরমের স্ত্রী ঠুনকি মুরমু বলেন, আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে আমার পিতা রামজিদ মুরমু এখানে বাড়ি ঘর করে বসবাস করত। কিন্তু প্রায় ৫০ বছর আগে মাস্টারের পিতা কছিমুদ্দিন আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে জায়গাটি জবরদখল করেছেন। এটা খাস জায়গা কখানো কেনা-বেচা হয়নি। এবিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, এখানো এমপি মহোদয়ের কেনা অনেক জায়গায় আদিবাসী ও সাধারণ ভুমিহীন মানুষেরা বসবাস করছেন। যেখানে এখানো বিভিন্ন এলাকায় এমপির শত শত বিঘা জমি চাষাবাদ করে ভুমিহীন মানুষেরা জীবীকা নির্বাহ করছে। সেখানে এমপির পিতা জমি বিক্রি করেছেন এমন নজির নাই। তিনি বলেন, আনোয়ার মাস্টার ও তার শশুর মিলে জাল দলিল করে এসব জায়গা জবরদখল করে আছে। এবিষয়ে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমানত আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।