এদিকে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বরখাস্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকায় অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিষ্টি বিতরণ করেছে। একই গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছুটির দিনে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে নিজ ছেলেকে কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী ল্যাব পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সেই নিয়োগ বাতিল বা তার পুত্রকে বরখাস্তের দাবি তুলেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট সকালে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রতিবাদে মহাসড়কে আন্দোলন করছিলেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। আন্দোলনকারীরা মিঠুর নেতৃত্বে এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম কথা বলার কথা বলে কৌশলে মিঠুকে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মহাসিনকে খবর দেন। এ সময় তার প্ররোচনায় ও উপস্থিতিতে তার অনুগত বারঠা গ্রামের মুকবুল সোনারের পুত্র মহাসিন আলী, আকতারুল ইসলাম ও মনা দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ফিল্মি-স্টাইলে মিঠুর ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিন বিদ্যালয়ে জরুরি সভার আহব্বান করা হয়। ইতোপুর্বে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাধিকবার মানববন্ধনও করেছেন এলাকাবাসী। গত ২৪ আগস্টের কমিটির সভায় অবৈধ ভাবে গ্রহণকৃত টাকা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত প্রদান, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে রেজিষ্ট্রি দেয়া হয়েছে তা নিজ দায়িত্বে বিদ্যালয়ের নামে ফিরিয়ে দেয়া, বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে অর্থগ্রহণের কারণে থানা এবং আদালতে যে সকল অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তা নিজ দায়িত্বে নিজ খরচে দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তিসহ বিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাপটপ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র প্রধান শিক্ষক তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করছেন সেসব ৩ দিনের মধ্যে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম নোটিশ গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ডাকযোগে রেজিষ্ট্রি চিঠির মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণ করা হলেও তা রিসিভ করেননি। মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত থাকলেও স্বাক্ষর করেননি এবং নোটিশের জবাব না দেয়ার কারণে গত ৩ অক্টোবর বিকেলে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে কমিটির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ প্রদান করেন সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিক।
এদিকে ৩ অক্টোবরের উল্লেখিত আলোচনায় বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম নিজামের কাছ থেকে ২০১৭ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত নগদ ৩১ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন তা প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত কাগজপত্র পাওয়া গেছে। এভাবে প্রধান শিক্ষক প্রায় কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন তা বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা দেয়া বা মানি রিসিভ পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়োমিত এবং সময় মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। যার কারণে শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় পরবর্তীতে উপস্থিতি স্বাক্ষর করতে হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ আলোচনা সভায় উত্থাপিত হয়। ২০১৪ এবং ২০১৭ সালেও তিনি সাময়িক বরখাস্ত হন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত,অভিভাবক সদস্য আব্দুল আজিজ বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষককে আসামি করে রাজশাহী জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এ মামলা করেছেন। মামলা সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ব্যক্তি স্বার্থে বিক্রয় বা ব্যাংকে মর্টগেজ দিয়ে গ্রহণের অনুমতি নই।কিন্তু কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জমি (কেশরহাট মৌজা, জেএল নং ১০৮, হাল দাগনং ৬২৬, ৬২৪, ৬২৫, ৬২৬, ৬২৭, ৬২৮, ৬২৯ ও ৬৩২, পরিমান- ১ দশমিক ৪৩৩২ একর) বন্ধক দিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার মর্টগেজ দলিল নম্বর ৩০২৫/২০২০ এবং পাওয়ার অব এটর্নি নম্বর ৩০২৬/২০২০। তবে এই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে (হিসাব নম্বর ১৩১ রায়ঘাটি শাখা) জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন।অন্যদিকে কেশরহাট স্কুল
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক বলিরপাঠা, তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান এ্যাডঃ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, গোপণে তদন্ত করলে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এবিষয়ে বক্তব্য নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে একাধিকার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমন কি খুদে বার্তা পাঠিয়ে জবাব মেলেনি। এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র রুস্তম আলী প্রামাণিক জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। তিনি বিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছেন। তিনি একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি করেই চলেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ যেন নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ২৪ আগস্ট তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রকার জবাব না দেয়ার কারণে ৩ অক্টোবর ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের আলোকে প্রধান শিক্ষককে আবারও সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মাঝে অনেকটায় স্বস্তি ফিরেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ শামীম আহমেদ