রাজশাহীতে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের চার নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়ার ঘোষণা দেয়া নেতারা হলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান। তিনি রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে ভোটে লড়তে চান এই প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়াও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার এবং তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ আসনে টানা পঞ্চম বারের মতো নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি। এদের মধ্যে আখতারুজ্জামান আখতার গেলো রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করেছিলেন। তবে সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে তিনি নৌকার মনোনিত প্রার্থী মীর ইকবালের কাছে পরাজিত হন।
অপরদিকে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ওই আসনে এবার নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। গত ২৭ নভেম্বর সোমবার এই চার নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আখতারুজ্জামান আখতার এবং গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ নভেম্বর রোববার গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে তিনি বিদ্রেহী প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিধি নিষেধ দেননি। বরং তিনি বলেছেন, এবার ভোটকে উৎসব মুখর করতে। তাই নির্বাচনে বেশী প্রার্থী হলে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দিপনা কাজ করবে ও ভোটকেন্দ্রে বেশী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে। এছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে কড়া কোন সিদ্ধান্তের কথাও বলেননি দলের সভাপতি।
তারা বলেন, তাদেরকে তৃণমুলের লোকজন চাইছে তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে তারা মনোনয়ন তুলবেন। তাদের আশা নির্বাচনে জনমত তাদের নিজের পক্ষে থাকবে বলে মনে করেন এই দুই নেতা।এদিকে রায়হানুল হক রায়হান বলেন, তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে রাজশাহী-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তবে তিনি এক বারও দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দল থেকে বাধা নেই। এছাড়াও জনগন চাইছেন তিনি যেনো ভোটে আসেন। তাই রিটানিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
অপরদিকে, ফেসবুক লাইভে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আহসানুল হক মাসুদ। তিনি বলেন, রাজশাহী-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রক্রিয়া করার দরকার সবই তিনি করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি নির্বাচন করতে প্রার্থী হয়েছেন। কারণ ভোট হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক এবং গ্রহণযোগ্যতামূলক। প্রার্থী যত বেশি হবে ভোটারও ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে আগ্রহের সঙ্গে আসবে। তাই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ফলো করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতেই প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। পুঠিয়া-দূর্গাপুরের জনগণ তাকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তিনি শতভাগ আশা করেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে তিনি জয়লাভ করবেন।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ৪৭ জন। রোববার দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এতে রাজশাহীর ছয়টি আসনে দলীয় মনোনয়ন পান রাজশাহী-১ আসনে টানা তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী-৩ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনে তাহেরপুর পৌরসভার তিনবারের মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবং রাজশাহী-৬ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারী।
এদিকে স্থানীয় নেতা, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে কর্মী-জনবান্ধব, আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর পক্ষে যেই জনসমর্থন ও প্রবল জনশ্রোত রয়েছে। সেই জনশ্রোতের বিপরীতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার মতো সামর্থ্যে নাই স্থানীয় কোনো নেতৃত্বের