রাজশাহী অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক সহাবস্থান, সৎ নেতৃত্ব, দিনবদল-রাজনীতিতে সুস্থধারা, আদর্শিক নেতৃত্ব ও সৎ রাজনৈতিকের প্রতিকৃতি সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী। রাজশাহী-১ ভিআইপি এই সংসদীয় আসনে একটানা চারবার নির্বাচিত সাংসদ ও হেভিওয়েট নেতা ওমর ফারুক চৌধুরীকে এবারো মন্ত্রী না করায় রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ। রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনে প্রায় ২২ লাখ ভোটারের ধারণা তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ঘটবে অপেক্ষার অবসান। দেশ পরিচালনায় থাকবে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি কিন্তু এবারো সেট হলো না।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মন্ত্রীসভায় রাজশাহীবাসী এবার কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী পায়নি। ঠাঁই হয়নি রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের কোনো এমপির। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে রাজশাহীর কাউকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়নি। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হলো। পুরনোদের সঙ্গে এক ঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে মন্ত্রীসভা সাজিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের মন্ত্রীসভা আগামী পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা করবে। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ ভেবেছিলো সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তাদের একজন, বলবেন তাদের হয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষের কথা। সবার ধারণা ছিল এবার রাজশাহী-১ আসনের টানা চারবারের সাংসদ ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীকে মন্ত্রী করা হবে, অথবা রাজশাহী-৬ আসন থেকে নির্বাচিত দুই মেয়াদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে করা হতে পারে পূর্ণ মন্ত্রী। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জানা গেলো এবার মন্ত্রীসভায় জায়গা পাচ্ছেন কারা। দেখা গেলো রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের ধারণায় থাকা কেউই ঠাঁই পাইনি মন্ত্রী পরিষদে।
জানা গেছে, রাজশাহীর কৃতী সন্তান জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা প্রবাসী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। পরে ১৯৭৯ সালে রাজশাহী থেকে জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন প্রয়াত এমরান আলী সরকার। এরশাদ সরকারের আমলে রাজশাহীতে সরদার আমজাদ হোসেন দুই দফায় পূর্ণ মন্ত্রী ও মেসবাহউদ্দিন বাবলু এবং নুরুন্নবী চাঁদ প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে রাজশাহী থেকে সংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও চারদলীয় জোট সরকারের (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) পূর্ণ মন্ত্রী হন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও প্রতিমন্ত্রী হন প্রয়াত কবীর হোসেন। একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রাজশাহী থেকে অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী করা হয় টেকনোক্র্যাট কোটায়।এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে রাজশাহী থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিলো কয়েক মাসের জন্য। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী থেকে শাহরিয়ার আলম দুই দফায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও এবার বাদ পড়েছেন। প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় রাজশাহীর সামগ্রিক উন্নয়নে তার কোনো ভূমিকাও ছিল না বলে দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। তবে ফারুক চৌধুরী শিল্প প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তানোর ও গোদাগাড়ীতে ব্যাপক কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এবিষয়ে শিক্ষক নেতা ও রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার মোঃ শাহাদুল হক বলেন, বরাবরই মন্ত্রী বঞ্চিত থাকছেন রাজশাহীবাসী। রাজশাহী ১ আসন থেকে নির্বাচিত প্রয়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছিলেন।
একবার শিল্প প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকেও এবার মন্ত্রী সভায় স্থান দেয়া হবে বলে অনেকের ধারনা ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত না হওয়ায় নেতা কমী এলাকাবাসী হতাশ হয়েছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একই মন্তব্য করেন গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার অশোক কুমার চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সুনন্দন দাস রতন। দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দীন সোহেল বলেন, আমারা আশা করেছিলাম ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি মহোদয়কে মন্ত্রী করা হবে কিন্তু হয় নি, এলাকাবাসী হতাশ হয়েছেন। এখনও হাল ছাড়িনি আগামীতে মন্ত্রী পরিষদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে অবশ্যই স্থান পাবেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলে তারা আশাবাদী। একই মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি এমএন রিদওয়ান ফিরদৌর।
তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, বিশাল ভোটের ব্যবধানে বার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন সে দিক থেকে আমরা আশা করেছিলাম উনি এবার মন্ত্রী হবেন। কিন্তু রাজশাহী বাসী হতাশ হয়েছেন। একই মন্তব্য করেন, গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম , গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র অয়জুদ্দিন বিশ্বাস, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আব্দুর রশিদ, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল ইসলাম নাসিম প্রমূখ। এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, বরাবরই অবহেলিত রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চল। সাবেক রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় আনুপাতিক হিসাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়নি অতীতেও। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ কোটি ৯৬ লাখ মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগের কাছাকাছি। অনেক দিন ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনাতেও দেশের উত্তরাঞ্চলকে বাদ রাখা হয় বিভিন্ন উপায়ে। এবার রাজশাহী থেকেও কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। ফলে আগামীতে সমতাভিত্তিক ও অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়নের আশাও করা যায় না। রাজশাহী থেকে একজন মন্ত্রী থাকলে হয়তো সেটা সম্ভব হতো। এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রাজশাহীতে প্রভূত উন্নয়ন করেছেন। আশা করি মন্ত্রী না থাকলেও আঞ্চলিক উন্নয়নে কোনো সমস্যা হবে না।